নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও পূর্বপুরুষদের পেশা টিকিয়ে রেখেছেন বরিশালের মৃিশল্পীরা। আর বর্তমানে বিভিন্ন প্লাস্টিকের সামগ্রীর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা মাটির তৈরি জিনিসপত্র। পিরোজপুরের কাউখালীর সোনকুর গ্রামের সুবোদ চন্দ্র পাল(৫৫) জানান, কম দামে বাজারে এখন অনেক টেকসই প্লাষ্টিক, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিলের তৈরি পণ্যের দাপটে কমে গেছে মাটির জিনিসের কদর।
এছাড়া পরিশ্রম অনুযায়ী এ পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ পেশার প্রতি তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই খুঁজছেন বিকল্প পেশা। তিনি আরো জানান, মানুষের রুচিবোধ, নান্দনিকতা এবং ব্যবহারিক প্রয়োজন মেটাতে যুগ যুগ ধরে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও কোনো সরকারি বেসরকারি সংস্থা এ শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেনি। যার ফলে পরিবারভিত্তিক বা পাড়াভিত্তিক গড়ে ওঠা এ শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে।
বরিশালের বাকেরগঞ্জের মহেশপুর গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল(৬০) জানান, তাদের শিল্প কর্মক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে পাওয়া যায় এঁটেল মাটি। যা কিনে নৌকা ভাড়া দিয়ে শ্রমিকের মজুরি মিটিয়ে পণ্য তৈরি করা পর্যন্ত যা খরচ হয় অনেক সময় তার অর্ধেকও আয় হয় না। এ অবস্থায় আমাদের বিকল্প চিন্তা করা অস্বাভাবিক নয়। মহেশপুরের দুলাল চন্দ্র পাল(৫৫) জানান, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে একসময় আমাদের এ ব্যবসা জমজমাট ছিল। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা বিলীন হওয়ার পথে।
স্থানীয় নিয়ামতি ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন মাছুম জানান, মৃিশল্পকে বাঁচাতে প্রয়োজন শিল্পি, শিল্পিকে বাঁচাতে প্রয়োজন নানামুখী পদক্ষেপ, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণ। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপগুলোই আমাদের দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করবে। এ পেশায় জড়িত গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিল্লগ্রামের শতাধিক পরিবার কোনোমতে এ পেশায় টিকে আছে। তারা জানান, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে মৃিশল্পীদের তৈরি জিনিসপত্র পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে মেলায় নিয়ে বিক্রি করছে। আগৈলঝাড়ার গৈলার শিহিপাশা গ্রাম, জোবারগ্রামের পালপাড়া, বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের পালপাড়া, উজিরপুরের কালিবাড়িস্থ পালপাড়া, সদর উপজেলার চর আইচাসহ বিভিন্ন পালপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মৃিশল্পীদের নানা কষ্টের কাহিনি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply